নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন

2981
article image

একটি ব্যবসায় পরিচালনা করে প্রাপ্ত যাবতীয় আয় থেকে যাবতীয় ব্যয়গুলো বাদ দিলে নিট মুনাফা পাওয়া যায়। একটি প্রতিষ্ঠান ঠিক কতোটা লাভজনক, তা নিট মুনাফা’র মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। প্রতিষ্ঠানের কয়েক বছরের নিট মুনাফার ট্রেন্ড দেখেই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার বা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

Key Points

  • ব্যবসায় পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খরচাদি যেমন বিক্রীত পণ্যের ব্যয়, পরিচালনা খরচ, বিক্রয় সম্পর্কিত ব্যয়, সুদ খরচ, অবচয়, ট্যাক্স ইত্যাদি বাদ দেয়ার পর ফাইনাল যে এমাউন্ট অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট মুনাফা বলা হয়।
  • নিট মুনাফাকে ‘আয় বিবরণী’র একদম শেষে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
  • এটি ব্যবসায়ের নির্ভরযোগ্যতা তৈরিতে সাহায্য করে।
  • মোট আয় - মোট ব্যয় = নিট মুনাফা
  • ব্যয়ের তুলনায় যদি আয়ের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে এখানে নিট মুনাফা পাওয়া যাবে। আর যদি আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তবে এখানে নিট ক্ষতি পাওয়া যাবে।

নিট মুনাফা (net profit)

ব্যবসায়ের সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে এর আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি ব্যবসায়ের আয়, ব্যয় সম্পর্কে যদি শেয়ারহোল্ডার, অডিটর, ম্যানেজাররা অবগত থাকেন, তাহলে উপযুক্ত কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। সঠিক তথ্য এবং উপাত্তের উপর নির্ভর করে নেয়া এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা’ও তখন বৃদ্ধি পায় বহুগুণ।

ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা অনুমান করার জন্য নিট মুনাফা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক। ব্যবসায়টি কি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে নাকি ব্যবসায়টি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা এই একটি এককের দ্বারা’ই বোঝা যায়। নিট মুনাফা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা রাখলে ব্যবসায়ের বিভিন্ন কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সুবিধা হয়।

তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা নিট মুনাফা কি, কিভাবে ক্যালকুলেট করতে হবে এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

নিট মুনাফা কী?

ব্যবসায় পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খরচাদি যেমন বিক্রীত পণ্যের ব্যয়, পরিচালনা খরচ, বিক্রয় সম্পর্কিত ব্যয়, সুদ খরচ, অবচয়, ট্যাক্স ইত্যাদি বাদ দেয়ার পর ফাইনাল যে এমাউন্ট অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট মুনাফা বলা হয়। মনে করুন, আপনি ১০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছেন এবং এই বিক্রয় করা পর্যন্ত আপনার যাবতীয় খরচ করতে হয়েছে ৮০ টাকা। তাহলে আপনার নিট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ টাকা।

নিট মুনাফা’কে একটি ব্যবসায় পরিচালন থেকে নিট আয়’ও বলা যায়। নিট মুনাফাকে ‘আয় বিবরণী’র একদম শেষে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।

নিট মুনাফা কিভাবে ক্যালকুলেট করবেন?

নিট মুনাফা নির্ধারণ করতে হলে আপনাকে নিচের সূত্রটি ব্যবহার করতে হবে -

মোট আয় - মোট ব্যয় = নিট মুনাফা

নিট মুনাফা ক্যালকুলেশনের স্বার্থে এবং ব্যবসায়ের আর্থিক পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে বুঝতে আপনাকে নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে -

১। মোট আয় নির্ণয় করুন : আপনার ব্যবসায়ের ঠিক যতোগুলো ইনকাম সোর্স আছে, সবগুলো একসাথে যোগ করে মোট আয় নির্ণয় করতে হবে।

২। মোট ব্যয় নির্ণয় করুন : ব্যবসায় পরিচালনার স্বার্থে ঠিক কতো টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, সেটি গণনা করতে হবে। এইক্ষেত্রে, ছোট থেকে বড় সবধরণের ব্যয় এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যেমন - পণ্য ক্রয়, কর্মীদের বেতন, অফিস ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, অবচয় ইত্যাদি। সবগুলো একত্রে যোগ করে মোট ব্যয় নির্ণয় করতে হবে।

৩। মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বিয়োগ করুন : মোট আয় থেকে মোট ব্যয়ের পরিমাণ বাদ দিলেই ব্যবসায়ের নিট মুনাফা সম্পর্কে জানা যাবে। ব্যয়ের তুলনায় যদি আয়ের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে এখানে নিট মুনাফা পাওয়া যাবে। আর যদি আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় তবে এখানে নিট ক্ষতি পাওয়া যাবে।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো ভালো করে বোঝা যাক -

এপ্রিলে মাসে আপনার ব্যবসায় থেকে মোট আয়ের পরিমাণ ছিল ৪,৫০,০০০ টাকা এবং মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২,৮০,০০০ টাকা। তাহলে নিট মুনাফার পরিমাণ কতো হবে?

নিট মুনাফা = মোট আয়সমূহ - মোট ব্যয়সমূহ

সুতরাং, নিট মুনাফা = (৪,৫০,০০০ - ২,৮০,০০০) = ১,৭০,০০০ টাকা

তাহলে এপ্রিল মাসে আপনার ব্যবসায়ের নিট মুনাফার পরিমাণ দাড়ালো ১,৭০,০০০ টাকা।

নিট মুনাফা এবং নিট মুনাফার হারের মাঝে পার্থক্য কী?

ব্যবসায়ের যাবতীয় আয় থেকে যাবতীয় ব্যয়ের টাকা বিয়োগ করলে আমরা নিট মুনাফা পেয়ে যাই। অপরদিকে, নিট মুনাফার পরিমাণকে বিক্রয়ের পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে আমরা পাই নিট মুনাফার হার। অর্থাৎ, নিট মুনাফা সরাসরি টাকার অংক প্রকাশ করে এবং নিট মুনাফার হার প্রকাশ করে যে বিক্রয় থেকে পাওয়া টাকার ঠিক কতো শতাংশ অর্থ দিনশেষে আমাদের কাছে অবশিষ্ট রয়েছে।

নিট মুনাফার গুরুত্ব

ব্যবসায়ের মোট আয় এবং মোট ব্যয় বিবেচনা করে, ব্যবসায় পরিচালনা থেকে মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের ঠিক কেমন আয় হচ্ছে সেই সম্পর্কে জানায় নিট মুনাফা। মালিকদের আয় রিপ্রেজেন্ট করছে বলেই সকল আর্থিকের এককের উপর নিট মুনাফার অবস্থান। নিট মুনাফা হচ্ছে মানেই ব্যবসায়টি তার মালিকদের লভ্যাংশ প্রদান করতে পারছে, এটি একটি স্টেবল ব্যবসায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারগণ সন্তুষ্ট থাকেন এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে অন্যরাও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নিট মুনাফা’র আরো কিছু গুরুত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো -

এটি ব্যবসায়ের নির্ভরযোগ্যতা তৈরিতে সাহায্য করে।

কোন সময়ে ব্যবসায় বেশি লাভ করছে এবং কোন সময়ে লাভ কম হচ্ছে তা বুঝতে সাহায্য করে।

পরিসংহার

ব্যবসায়টি ঠিক কতোটা লাভজনক অথবা অলাভজনক তা নিট মুনাফার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। উদ্যোক্তাদের উচিৎ অন্তত মাসিক বা ষান্মাসিক ভিত্তিতে একবার নিট মুনাফা যাচাই করা। কোনো ব্যবসায়ে বিক্রয়ের পরিমাণ বিপুল হলেও, দিনশেষে তার ভালো একটি অংশ যদি নিট মুনাফা হিসেবে ধরে রাখা না যায় তবে অবশ্যই বিজনেস মডেলে পরিবর্তন আনার কথা ভাবতে হবে। 
 


Next to read
Canvas & Methods
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)
সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস (Social Business Model Canvas)

সামাজিক উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা আরো সহজ করে দেয় সোশ্যাল বিজনেস মডেল ক্যানভাস টুল। মূলত বহুল ব্যবহৃত বিজনেস মডেল ক্যানভাস টুল থেকেই সামাজিক সংগঠনের কিংবা প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী করে এই মডেলটি তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের সামাজিক উন্নয়নে কোনো আইডিয়া এই টুলের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট সিন্ধান্তে আসা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।

অ্যাড অন মডেল (Add On Model)
Business Models
অ্যাড অন মডেল (Add On Model)
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)
Business Models
শেয়ারিং ইকোনমি মডেল (Sharing Economy Model)
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
Marketing
মার্কেটিং এর ৭'পি (7P’s of Marketing)
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
Business
নিট মুনাফা (net profit) সংজ্ঞা, সূত্র এবং কিভাবে হিসাব করবেন
ব্রান্ডিং (Branding)
Branding
ব্রান্ডিং (Branding)
রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
Branding
রিব্র্যান্ডিং (Rebranding)
সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?
Sales
সেলস ফানেল বা বিক্রয় ফানেল কি?
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
Marketing
অ্যাম্বুশ মার্কেটিং (Ambush Marketing)
ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী? সংজ্ঞা, মডেল এবং উদাহরণ
Branding
ব্র্যান্ড আর্কিটেকচার কী? সংজ্ঞা, মডেল এবং উদাহরণ