ব্র্যান্ড ইমেজ : A to Z

270
article image

আপনার ব্র্যান্ড কি কাস্টমারদের মনে জায়গা করে নিতে পারবে কি না তা নির্ধারণ করে আপনার ব্র্যান্ড ইমেজ। পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ মার্কেট ও কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশনে ইতিবাচক প্রভাব রাখে অপরদিকে নেগেটিভ ব্র্যান্ড ইমেজের কারনে বিশাল সংখ্যক কাস্টমার হাতছাড়া হয়ে যায়।

Key Points

  • কাস্টমাররা আপনার ব্র্যান্ডকে কিভাবে দেখছে এবং কেমন মনোভাব পোষণ করছে, তা ঘিরেই ব্র্যান্ড ইমেজ-এর কনসেপ্ট আবর্তিত।
  • আপনার ব্র্যান্ড যদি কাস্টমারদের প্রয়োজন ভালোভাবে পূরণ করতে পারে এবং কাস্টমারদের মনে একটি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলে, তাহলে ব্র্যান্ড ইমেজ হবে ইতিবাচক।
  • ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি হচ্ছে যে - আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে কাস্টমারদের কাছে কিভাবে তুলে ধরছেন অথবা কাস্টমারদের কি ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করছেন।
  • ব্র্যান্ড ইমেজ পরিমাপ করার সবচেয়ে ইফেক্টিভ উপায় হচ্ছে সার্ভে পরিচালনা করা।

ভূমিকা

আপনার প্রতিষ্ঠান যখন কোনো মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালায় অথবা নতুন কোনো প্রোডাক্ট লঞ্চ করে, তখন আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে কাস্টমারদের মনে একটি ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। এই মনোভাব পরবর্তী সময়ে উক্ত কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট কিনবেন নাকি কিনবেন না, সেই সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভালো একটি ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে পারায় সাধারণ সব কোম্পানী বছরের পর বছর ধরে মার্কেটে টিকে থাকতে পারছে। অপরদিকে ব্র্যান্ড ইমেজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বহু কোম্পানীকে অকালে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে।

ব্র্যান্ড ইমেজ কী?

সহজ ভাষায়, ব্র্যান্ড ইমেজ হচ্ছে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে কাস্টমারদের ধারণা। কাস্টমাররা আপনার ব্র্যান্ডকে কিভাবে দেখছে এবং কেমন মনোভাব পোষণ করছে, তা ঘিরেই ব্র্যান্ড ইমেজ-এর কনসেপ্ট আবর্তিত। আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে কাস্টমারদের ধারনা ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক যেকোনো প্রকার হতে পারে।

আপনার ব্র্যান্ড যদি কাস্টমারদের প্রয়োজন ভালোভাবে পূরণ করতে পারে এবং কাস্টমারদের মনে একটি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলে, তাহলে ব্র্যান্ড ইমেজ হবে ইতিবাচক। আর এর অপরটি ঘটলে, অর্থাৎ আপনার ব্র্যান্ড কাস্টমারদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হলে এবং নেগিটিভ্লি ইমপ্যাক্ট ফেললে ব্র্যান্ড ইমেজ হয়ে যাবে নেতিবাচক।

ব্র্যান্ড ইমেজ vs ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি

অনেকেই ব্র্যান্ড ইমেজকে ব্র্যান্ড আইডেন্টিটির সাথে গুলিয়ে ফেলেন, অথচ দুটি বিষয়ের মাঝে যথেষ্ট দুরত্ব বিদ্যমান। ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি হচ্ছে যে - আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে কাস্টমারদের কাছে কিভাবে তুলে ধরছেন অথবা কাস্টমারদের কি ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করছেন। আর ব্র্যান্ড ইমেজ হচ্ছে যে কাস্টমাররা আপনার ব্র্যান্ডকে কিভাবে দেখছে।

ব্র্যান্ড ইমেজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে নির্ধারিত হয় এবং ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে তৈরি করা হয়। সঠিক উপায়ে মার্কেটিং করার ফলে অনেক সময় ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি এবং ব্র্যান্ড ইমেজ এক করে ফেলা গেলেও বেশিরভাগ সময়ই দুটি যথেষ্ট ভিন্ন থাকে।

যেভাবে ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করবেন

নিম্নোক্ত কাজগুলো করার মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানীর একটি পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে পারবেন।

১। একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করুন

কাস্টমারদের কাছে একটি সুন্দর এবং সুগঠিত ম্যাসেজ পৌছে দেয়ার চেষ্টা করুন। আপনার প্রতিষ্ঠান কোন লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এবং কোন সমস্যাটি সমাধান করার পেছনে কাজ করছে, আপনারা কি কি অ্যাপ্রিশিয়েবল স্টেপ নিচ্ছেন এগুলো সঠিক উপায়ে কাস্টমারদের কাছে পৌছানোর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করা সম্ভব।

আপনার ব্র্যান্ডের কথা এবং কাজের মাঝে যদি মিল থাকে তাহলে আপনি যেভাবে ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করবেন, সেভাবেই আপনার ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি হবে।

উদাহরণস্বরুপ, কোকাকোলা’র কথা বলা যায়। তারা ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি হিসেবে এমন একটি ম্যাসেজ সিলেক্ট করেছে যেখানে মানুষ বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, ফ্যামিলি গেট-টুগেদারে, কোনো অ্যাচিভমেন্ট সেলিব্রেশনে কোকাকোলা পান করে। এতে করে কাস্টমারদের মনে তাদের একটি পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি হয়ে গিয়েছে।

২। অ্যাকুরেট টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করুন

আপনার প্রোডাক্ট এবং ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি কোন ধরণের অডিয়েন্সের জন্য আদর্শ হবে তা যথেষ্ট মার্কেট রিসার্চ করে সিলেক্ট করতে হবে। আপনার শক্তিশালী ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি কোনো কাজেই আসবে না যদি তা ভুল অডিয়েন্সকে টার্গেট করে প্রচার করা হয়।

৩। কাস্টমারদের গুরুত্ব দিন

যদি প্রশ্ন করা হয় যে আপনি কাদের কাছে পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে চাইছেন? উত্তরটি হবে - কাস্টমারদের কাছে। তাই আপনাকে কাস্টমারদের গুরুত্ব দিতেই হবে। আপনাকে ক্রমাগত ভাবতে হবে যে কিভাবে কাস্টমার এক্সপিরিয়েন্স আরো ইম্প্রুভ করা যায়, কিভাবে কাস্টমার কেয়ার আরো সহজ করা যায় ইত্যাদি।

আপনার সার্ভিসের প্রতিটি পয়েন্টে যেন কাস্টমাররা সুখকর একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে পারেন তা আপনাকে এনশিওর করতে হবে। একই সাথে কাস্টমারদের অভিযোগ এবং সাজেশন আমলে নিতে হবে।

৪। ইফেক্টিভ্লি কমিউনিকেট করুন

আপনি একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরি করলেন এবং কাস্টমার এক্সপিরিয়েন্সকে বিশ্বমানে নিয়ে গেলেন, এগুলোর কোনো দামই থাকবে না যদি আপনি এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে কমিউনিকেট না করতে পারেন। মার্কেটিং এবং পাবলিক রিলেশনস টিমের মাঝে স্বতঃস্ফুর্ত টিমওয়ার্কের মাধ্যমে এই কাজটি করা সম্ভব।

যেভাবে ব্র্যান্ড ইমেজ পরিমাপ করবেন

ব্র্যান্ড ইমেজ পরিমাপ করার সবচেয়ে ইফেক্টিভ উপায় হচ্ছে সার্ভে পরিচালনা করা। কারণ, আপনার ব্র্যান্ড ইমেজ সম্পর্কে সবচেয়ে অ্যাকুরেট তথ্য শুধু আপনার রেগুলার কাস্টমারদের কাছেই থাকে। তাই অনলাইন বা অফলাইন মিডিয়াম ব্যবহার করে কাস্টমারদের থেকে ব্র্যান্ড সম্পর্কে মনোভাব জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে ব্র্যান্ড ইমেজ পরিমাপ করা যায়।

তবে বেশি সংখ্যক মানুষ যেন সার্ভে’তে অংশগ্রহণ করে সেটা আপনাকে এনশিওর করতে হবে। কারণ, যতো বেশি সংখ্যক ডেটা কালেক্ট করা যাবে, অ্যানালিসিস থেকে আসা রেজাল্ট অ্যাকুরেট হওয়ার সম্ভাবনা ততোই বৃদ্ধি পাবে।

যেভাবে ব্র্যান্ড ইমেজ ইম্প্রুভ করবেন

সহজ তিনটি কাজ করার মাধ্যমে কোম্পানীর ব্র্যান্ড ইমেজ ইম্প্রুভ করা সম্ভব।

১। সার্ভে করার মাধ্যমে ব্র্যান্ড ইমেজ পরিমাপ করা

আপনাকে প্রথমেই সার্ভে করার মাধ্যমে ডেটা কালেক্ট করতে হবে। সার্ভে’কে ইফেক্টিভ করে তুলতে আপনি কাস্টমারদের কিছু ইনসেন্টিভ অফার করতে পারেন। যেমন - সার্ভে’তে অংশগ্রহণ করলে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড় পাবে।

২। সার্ভে থেকে আসা ডেটা অ্যানালিসিস করা

দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে সার্ভে থেকে আসা ডেটা অ্যানালিসিস করে ইনসাইট বের করে আনা। কাস্টমাররা আপনার কোন কাজে সবচেয়ে বেশি খুশি এবং কোন কাজে বিরক্ত, আপনার পণ্য বা সেবা ক্রয় করা এবং পরবর্তী সময়ে তারা কি ধরণের সমস্যা ফেইস করছেন তা বের করে আনা, তাদের কি কি সাজেশন রয়েছে সেগুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩। পরিবর্তন আনা

সার্ভে থেকে আসা ডেটা অ্যানালিসিস করে যে ইনসাইটগুলো বের হবে সেগুলো নিয়ে আপনার অ্যাকশন নিতে হবে। যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করতে হবে, কাস্টমারদের কমন সাজেশনগুলো ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। এই কাজ শুধু একবার করলেই হবে না, বরং ব্র্যান্ডের লাইফটাইমে প্রতিনিয়ত এই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

ব্র্যান্ড ইমেজ কেনো গুরুত্বপূর্ণ?

একটি পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ আপনার ব্র্যান্ডকে অনেকগুলো ফ্যাক্টরে সুবিধা প্রদান করবে। যেমন -

সুনাম

ইতিবাচক ব্র্যান্ড ইমেজ আপনার ব্র্যান্ডের সুনাম চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। কাস্টমাররা যদি আপনার ব্র্যান্ডকে এমন একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দেখে যাদের প্রোডাক্ট ভালো, প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম এবং দাম মানানসই, এটি আপনার ব্র্যান্ডের সুনাম বাড়িয়ে দেয় এবং অর্গানিক মার্কেটিং হিসেবে কাজ করে।

কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ

কম খরচ এবং ডিফারেনসিয়েশনের মতো একটি ইতিবাচক ব্র্যান্ড ইমেজ’ও কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ এনে দিতে পারে। আপনার প্রতিদ্বন্দীদের তুলনায় আপনার ব্র্যান্ড ইমেজ যদি বেশি ভালো হয়, তাহলে আপনি পণ্যের দাম বেশি রাখলেও কাস্টমাররা আপনার পণ্যই কিনতে চাইবে। এইযে কাস্টমারদের কাছে আপনার ব্র্যান্ডের অধিক গ্রহণযোগ্যতা, এটি আপনাকে কম্পিটিটিভ অ্যাডভান্টেজ পেতে সাহায্য করবে।

বারতি মুনাফা

পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ অর্গানিক মার্কেটিং-এর মতো কাজ করে। অর্থাৎ, কোনো প্রকার টাকা খরচ না করেই নতুন নতুন অডিয়েন্স আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতে পারে এবং আপনার পণ্য ট্রাই করে দেখে। এতে করে সেলস এবং প্রফিট দুটোই দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।

ক্রেডিবিলিটি

পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ কাস্টমারদের মনে আপনার ব্র্যান্ডের ক্রেডিবিলিটি বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ, আপনার কোম্পানী যখন নতুন কিছু লঞ্চ এবং মার্কেটিং করবে, তা কাস্টমাররা খুব সহজেই গ্রহণ এবং ট্রাই করে দেখবেন।

পরিসংহার

বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে একটি পজিটিভ ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করা যেমন অনেক বেশি সহজ, তেমন মুহুর্তেই সেটি নষ্ট’ও হয়ে যেতে পারে। তাই ব্র্যান্ড ইমেজ বিল্ড করার প্রতিটি ধাপে প্রচুর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এইক্ষেত্রে প্রথমে ইমেজ তৈরির পুরো রোডম্যাপ হাতে নিয়ে তারপর মাঠে নামাই শ্রেয়।

  • https://www.feedough.com/brand-image-explanation-examples/
  • https://www.surveymonkey.com/mp/brand-image/
  • https://www.qualtrics.com/experience-management/brand/brand-image/
  • https://www.appinio.com/en/blog/market-research/brand-image-measurement
Next to read
Canvas & Methods
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)
মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট (Minimum Viable Product)

অধিক শ্রম ও অর্থ খরচের এই ঝুঁকি এড়াতে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন ধরনের বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি যেখানে পণ্য প্রয়োজনীয় কিছু ফিচার দিয়ে বাজারজাত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাহিদা পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে এই পণ্যের উন্নয়ন করা হয় এবং নতুন নতুন উপাদান/ফিচার যুক্ত করা হয়। ব্যবসায়িক জগতে একে বলা হয় মিনিমাম ভায়েবল প্রোডাক্ট।

সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
Canvas & Methods
সোশ্যাল ইম্প্যাথি ম্যাপিং (Social Empathy Mapping)
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
Business Models
ফ্রিমিয়াম মডেল (Freemium Model)
বেইট এন্ড হুক মডেল  (Bait & Hook Model)
Business Models
বেইট এন্ড হুক মডেল (Bait & Hook Model)
PESTLE বিশ্লেষণ
Analysis
PESTLE বিশ্লেষণ
সেলস এবং মার্কেটিং কিভাবে একসাথে কাজ করে
Sales
সেলস এবং মার্কেটিং কিভাবে একসাথে কাজ করে
General Agreement on Tariffs and Trade (GATT)
Agreement
General Agreement on Tariffs and Trade (GATT)
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
E-Commerce
মাল্টি ভেন্ডর ই-কমার্স (Multi Vendor E-commerce)
সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)
E-Commerce
সিঙ্গেল ব্রান্ডেড ই-কমার্স (Single Branded E-commerce)
SEO (Search Engine Optimization for Websites)
Digital Marketing
SEO (Search Engine Optimization for Websites)