কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট

351
article image

একজন সম্ভাব্য কাস্টমারকে আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি আকৃষ্ট করা থেকে শুরু করে পণ্য বা সেবাটি ক্রয় করানো পর্যন্ত আপনাকে মার্কেটিং-এ যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়, তাকেই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বলা হয়। কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট সম্পর্কে জানা থাকলে মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের সফলতা বা ব্যর্থতা পরিমাপ করা সহজ হয়ে যায়। সহজ কিছু পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমেই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কমানো এবং ইম্প্রুভ করা সম্ভব।

Key Points

  • মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি এবং ক্যাম্পেইনের সফলতা পরিমাপ করার জন্য অবশ্যই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট সম্পর্কে জানত হবে।
  • একজন সম্ভাব্য কাস্টমারকে আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি আকৃষ্ট করতে বেশি কিছু টাকা খরচ করতে হয়, একেই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বলে।
  • কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট = মোট মার্কেটিং খরচ / নতুন কাস্টমারের সংখ্যা
  • কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কমানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে রিসোর্স ডাইভার্ট করা যায়।

ভূমিকা

নতুন নতুন লিড এবং কাস্টমার অ্যাক্যুয়ার করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই কাজটি হরহামেশাই করতে হয়। তারা নিজেদের সমস্ত রিসোর্স ব্যবহার করে নতুন নতুন কাস্টমার অ্যাক্যুয়ার করার চেষ্টা করে। তবে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি এবং ক্যাম্পেইনের সফলতা পরিমাপ করার জন্য অবশ্যই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট সম্পর্কে জানত হবে।

একটি কোম্পানীর কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট যতোটা কম হবে ততো বেশি ভালো। যদি কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বেশি হয় এবং কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু কম হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের রিসোর্সগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার হচ্ছে না বলে বুঝতে হবে। কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কেনো কমানো দরকার? কারণ, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের রেভিনিউ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কী?

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট হচ্ছে একজন নতুন কাস্টমার তৈরির পেছনের খরচ। একজন সম্ভাব্য কাস্টমারকে আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি আকৃষ্ট করতে বেশি কিছু টাকা খরচ করতে হয়, একেই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বলে। মার্কেটিয়ারদের বেতন, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন রান করার খরচ, বিজ্ঞাপন খরচ ইত্যাদি এই কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট-এর অন্তর্ভুক্ত।

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট ক্যালকুলেট করবেন কীভাবে?

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট ক্যালকুলেট করার জন্য নিম্নোক্ত ফরমুলাটি ব্যবহার করবেন -

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট = মোট মার্কেটিং খরচ / নতুন কাস্টমারের সংখ্যা



এই ফরমুলাটি ব্যবহার করে আপনি যেকোনো মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বের করতে পারবেন। প্রথমেই আপনাকে ক্যাম্পেইনের মোট খরচ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে (যেমন - মার্কেটিয়ারদের বেতন, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন রান করার খরচ, বিজ্ঞাপন খরচ ইত্যাদি)। এরপর সেই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নতুন কতোজন কাস্টমার আপনার পণ্য ক্রয় করলেন অথবা সেবা উপভোগ করলেন সেই পরিসংখ্যানটি জানতে হবে। মোট মার্কেটিং খরচকে নতুন কাস্টমারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই আপনি প্রতি কাস্টমারের অ্যাক্যুইজিশন কস্ট সম্পর্কে জানতে পারবেন।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া যাক -

মনে করুন, একটি মার্কেটিং ক্যাম্পেইন রান করার জন্য আপনার মার্কেটিয়ারদের বেতন দিয়ে হয়েছে ৫০০০৳, বিজ্ঞাপন ব্যয় হয়েছে ২০,০০০৳, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাড রান করেছেন ৫০০০৳ এবং এই ক্যাম্পেইনটি রান করার মাধ্যমে আপনি মোট ১২০ জন নতুন কাস্টমার পেয়েছেন। তাহলে আপনার কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কতো?

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট = (৫০০০ + ২০,০০০ + ৫০০০) / ১২০ = ২৫০ টাকা



অর্থাৎ, আপনার মোট মার্কেটিং খরচ হয়েছে ৩০,০০০ টাকা এবং ১২০ কাস্টমারের প্রতিজনের পেছনে আপনার ব্যয় করতে হয়েছে ২৫০৳ করে। উপরিউক্ত ক্যাম্পেইনে আপনার কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট ২৫০৳।

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট এবং কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু

কোনো মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে একজন কাস্টমারকে আপনার পণ্য বা সেবা ক্রয় করানোর প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়, তাকে কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বলে। অন্যদিকে, একজন কাস্টমার তার পুরো জীবনকালে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে মোট যতো টাকার পণ্য বা সেবা ক্রয় করে থাকেন তাকে কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট যতো কম হবে, কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু ততো বৃদ্ধি করা যাবে। অন্যদিকে, কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু’র বড় একটি অংশ যদি কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট হিসেবে চলে যায় তবে প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা ফেইস করতে হয়।

  • অনুপাত ১ঃ১ হলে প্রতিষ্ঠানের কোনো মুনাফা হচ্ছে না বলে বুঝতে হবে।
  • অনুপাত ১ঃ১ এর কম হলে প্রতিষ্ঠানের আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হচ্ছে বলে বুঝতে হবে।
  • অনুপাত ৩ঃ১ হলে কোম্পানী কাস্টমারদের ধরে রাখতে পারছে এবং দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল ভোগ করতে পারবে।
  • অনুপাত ৩ঃ১ এর বেশি হলে ভবিষ্যতে কোম্পানীর গ্রোথ পটেনশিয়াল অনেক ভালো বলে বুঝতে হবে।

তবে ইন্ডাস্ট্রিভেদে এই অনুপাতের পার্থক্য হতে পারে। কারণ, কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু এবং কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট-এর আদর্শ অনুপাত অনেকটাই ইন্ডাস্ট্রিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কীভাবে কমাবেন?

অনেক প্রতিষ্ঠান কাস্টমারদের জন্য মূল্যবান পণ্য এবং সেবা সরবরাহ করে। বাজার গবেষণা, প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট, এবং বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য তৈরি অন্যান্য কৌশল পরিচালনা করতে অনেক সময় ও অর্থ খরচ হয়। এই খরচগুলো আপনার কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট বাড়িয়ে দেয়। কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কমানোর কিছু উপায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো -

১। সঠিক অডিয়েন্সদের টার্গেট করুন।

একটি নির্দিষ্ট মার্কেট সেগমেন্ট টার্গেট না করে, পুরো মার্কেটকে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন রান করলে কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট অনেক বেড়্রে যায়। কারণ, এতে করে খরচ করতে হয় বেশি এবং নতুন কাস্টমার পাওয়া যায় কম। তাই শুধু এমন অডিয়েন্সদের পেছনেই আপনার রিসোর্স খরচ করুন যাদেরকে অ্যাক্যুয়ার করতে পারার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

২। অডিয়েন্সদের রিটার্গেট করুন।

একজন অডিয়েন্সকে যদি শুধু একবারই অ্যাড দেখানো হয় তবে তার পণ্য বা সেবাটি ক্রয় করার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম। অন্যদিকে একই অডিয়েন্সকে রিটার্গেট করে পুনরায় অ্যাড দেখানো হলে তাদের মাঝে আগ্রহ তৈরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এতে করে কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট অনেক কমে যায়। অপরদিকে প্রতিবার নতুন নতুন অডিয়েন্সকে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন রান করলে কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট অনেক বেড়ে যায়।

৩। পুরনো কাস্টমারদের টার্গেট করুন।

এমন অনেক কাস্টমার রয়েছেন, যারা হয়তো কোনো একসময় আপনার পণ্য বা সেবাটি উপভোগ করেছিলেন, তবে পরবর্তী সময়ে আর ক্রয় করেননি। তাদের টার্গেট করে অ্যাড রান করলে কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট অনেক কমে যায়। কারণ তারা আগেই একবার আপনার পণ্য বা সেবা উপভোগ করেছেন, এখন তাদের নজরে যদি আপনার নতুন কোনো পণ্য বা সেবার পড়ে যায়, তবে তারা সেটি ট্রাই করে দেখবেন এই সম্ভাবনাই বেশি।

৪। সেলস ফানেল ইম্প্রুভ করুন।

আপনি অডিয়েন্সদের অ্যাড দেখালেন, আপনার অ্যাড দেখে তারা পণ্য বা সেবাটি ট্রাই করতে আগ্রহী হলেন, কিন্তু আপনার সেলস ফানেল যদি সহজ না হয় তবে এই পুরো এফোর্ট বৃথা হয়ে যাবে। আপনার সেলস ফানেল বা অর্ডার কালেক্টিং সিস্টেম যতোটা সহজ হবে, অডিয়েন্স ততো সহজে আপনার পণ্য বা সেবাটি অর্ডার করতে পারবেন।

৫। রেফারেল প্রোগ্রাম ট্রাই করুন।

একজন কাস্টমার আপনার পণ্য বা সেবা ট্রাই করে যদি উপকৃত হোন, তবে তিনি অবশ্যই তার ফ্রেন্ড বা ফ্যামিলিকেও সেটি ট্রাই করতে সাজেস্ট করবেন। এর সাথে যদি আপনি কোনো রিওয়ার্ড সিস্টেম অ্যাড করে দিন, তাহলে সাজেস্ট করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এতে করে আপনি সাধারণ কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট-এর থেকে অনেক কমে আরো কিছু কাস্টমার পেয়ে যাবেন।

পরিসংহার

কোনো কোম্পানীর অনেক বেশি রেভিনিউ দেখে আপাতদৃষ্টিতে সেটিকে সফল বলে মনে হবে। তবে কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কম এবং কাস্টমার লাইফটাইম ভ্যালু বেশি না হলে দীর্ঘমেয়াদে যেকোনো কোম্পানীর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পরে। কাস্টমার অ্যাক্যুইজিশন কস্ট কমানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে রিসোর্স ডাইভার্ট করা যায়। এতে করে প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা এবং রেভিনিউ দুটোই বৃদ্ধি পায়।

  • https://www.datafeedwatch.com/blog/reduce-customer-acquisition-cost
  • https://neilpatel.com/blog/customer-acquisition-cost/
  • https://www.webfx.com/digital-marketing/learn/customer-acquisition-cost-formula/
  • https://www.profitwell.com/recur/all/calculate-and-reduce-cac
  • https://thegood.com/insights/customer-acquisition-cost/
Next to read
Business Models
কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)
কাস্টমার ডাটা মনেটাইজেশন মডেল (Customer Data Monetization Model)

কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেলে গ্রাহকদেরকে মূল সেবাটি বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। অতঃপর সুষ্ঠু পদ্ধতিতে গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রয় করা হয়। আর এই গ্রাহক তথ্য বিক্রয়ের মাধ্যমেই মূলত এই কাস্টমার ডেটা মনিটাইজেশন মডেল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল আয় করে থাকে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ
Marketing
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রসমূহ
কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)
Canvas & Methods
কাস্টমার এক্সপ্লোরেশন ম্যাপ (Customer Exploration Map)
সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)
Business Models
সাবস্ক্রিপশন মডেল (Subscription Model)
বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)
Business
বি-টু-বি, বি-টু-সি এবং বি-টু-জি কি? (B-to-B, B-to-C, B-to-G)
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
Business
CSR বা Corporate Social Responsibility কী?
ব্যষ্টিক অর্থনীতি বা Micro Economics কী?
Economics
ব্যষ্টিক অর্থনীতি বা Micro Economics কী?
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
Sales
সেলস কি এবং কিভাবে তা কাজ করে?
বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ
Sales
বিক্রয়ের ১০টি ভুল যেগুলো প্রতিটি বিক্রয়কর্মীর এড়ানো উচিৎ
World Trade Organization (WTO) Agreements
Agreement
World Trade Organization (WTO) Agreements